Hand Painting

ওয়াস পেইন্টিং কি? কাপড়ে ওয়াস পেইন্টিং।

Wash painting

ওয়াস পেইন্টিং কি?

Wash Paint শব্দে Wash অর্থ ধোয়া ও Paint অর্থ আমরা সাধারণভাবে রং বা রং তুলির কাজটাকেই বুঝি। পেইন্টিং রং তুলির কাজ হলেও এর সাথে wash শব্দটা একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। চলুন তাহলে জেনে নেই, কিভাবে কাপড়ে ওয়াস পেইন্টিং করে। Wash Painting মূলত জলরং পদ্ধতির রং এর হালকা – পাতলা  ব্যবহার। মোট কথা ধোয়াশা , কুয়াশা মিলেমিশে একাকার অথচ সাবজেক্ট নির্ভর ট্রান্সপারেন্ট একটা ভাব থাকবে। এরকম পেইন্টিং কে মূলত ওয়াস পেইন্টিং বলে।

কাপড়ে ওয়াস পেইন্টিং এর সূচনা

জলরং একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হলেও প্রাচীন কালে এর জনপ্রিয়তা ছিল না। ১৫ শতকের মাঝামাঝি থেকে জলরং ড্রইং এর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হত। তারপর ১৮ শতকের দিকে জলরং বিশেষভাবে ম্যাপ প্রস্তুতকারী, আমিন, মিলিটারি অফিসার, ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে জনপ্রিয়তা তথা ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। প্রাচীনকালে আধুনিক কোনো সহজলভ্য প্রযুক্তি না থাকায় জলরং এর মাধ্যমে সহজভাবে কাদ করে নিত। এরপর আস্তে আস্তে বানিজ্যিক কদর ও বাড়তে থাকে।ও মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করতে থাকে। ধারনা করা হয় , প্রাচীন ভারতীয়  দেব – দেবীর পেইন্টিং এর কাজে জলরং এর স্বচ্ছ মাধ্যমে আঁকা থেকে মূলত কাপড়ে আঁকার বিষয়টি আসে। প্রথম দিকে সাধারণভাবে আঁকিবুঁকি করা হলেও পরবর্তীতে কাপড়ে পেইন্টিং এ নতুন মাত্রা যোগ করে Wash Painting.

Painted By Supto Sishir

Wash Painting এ ভারতীয় ও পশ্চীমা শিল্পে কিছু নিজস্বতা ও বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য বিদ্যমান।ভারতীয় Wash Paintingপদ্ধতি কিছুটা মিলেমিশে একাকার। সাবজেক্ট বিশেষ Highlighted নয়। অপরদিকে পশ্চীমা  পদ্ধতিতে ওয়াস স্পষ্ট সুন্দর প্রকাশ।

তবে আধুনিক কালে কাপড়ে ওয়াস এর কাজ মূলত সব পদ্ধতির সংমিশ্রণে দৃষ্টিনন্দন জিবন্ত চিত্রশিল্প।

কাপড়ে ওয়াস পেইন্টিং:

কাপড়ে ওয়াস বর্তমানে জনপ্রিয় পদ্ধতি। পেইন্টিং প্রেমিদের কাছে ওয়াস পেইন্টেভ পোশাক যেন এক অন্যরকম ভালোবাসা।এটি মূলত জলরং বা water color থেকে এসেছে।এই পদ্ধতির মাধ্যমে যেকোনো কাপড়কে খুব আকষর্নীয় ও সুন্দর করে তোলা যায়।

তবে যেকোনো পদ্ধতি প্রয়োগ করার আগে তা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা ,জ্ঞান অর্জন ও অনুশীলন আবশ্যক।এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ পারস্পেকটিভ নিয়ে মোটামুটি ভালো একটা ধারনা থাকা। প্রপার কালার পারস্পেকটিভ পেইন্টিং কে আকর্ষণীয় করে তোলে।

কোথায় কি ধরনের কালার ব্যবহার করলে মেইন সাবজেক্ট ফোকাস হবে, ব্যাকগ্রাউন্ড এর আলো-ছায়া , কুয়াশা, মিলেমিশে একাকার বিষয়টা ঠিক থাকবে। এগুলো প্রপার কালার পারস্পেকটিভ এর মাধ্যমে নিশ্চ হতে পারে। ঠিকমত এপ্লাই না করতে পারলে কাজ এর ব্রাইটনেস কমে যেতে পারে। পোষাক আকর্ষণীয় নাও হতে পারে।

# কালার পারস্পেকটিভের ভালো ধারনা পেতে প্রাকটিস এর কোনো বিকল্প নেই। নতুন নতুন কাজ করতে হলে কোনো রেফারেন্স ফলো করলে ভালো হয়। রেফারেন্স ফলো করা মানে কিন্তু কপি করা নয়।

কাসড়ে ওয়াস পেইন্টিং এর প্রয়োজনীয় উপকরণ:

১.ডাইরেক্ট একরামিন রং।

২.এন.কে.ফিকসাল।

৩.বাইন্ডার।

৪.পানি।

৫.ওয়াটার কালার পেইন্ট ব্রাস।

৬.স্প্রে বতল/বড় ব্রাস।

রং তৈরি:

সমপরিমাণ এন.কে.ফিকসাল ও বাইন্ডার এর সাথে ২০% পরিমাণ ডাইরেক্ট একরামিন রং ভালোভাবে মিশিয়ে নিলে রং তৈরি হয়ে গেল।

# বি:দ্র: ইন্ডিয়ান কাচের কৌটার রং ও ব্যবহার করা যেতে পারে ।কিন্তু এই রং ব্যবহারে কাপড়টা কিছুটা হার্ড ও খসখসে হয়ে যেতে পারে।আবার বর্তমানে বাজারে ব্লক এর রেডি একরামিন পাওয়া যায় সেটা ও ব্যাবহার করা যেতে পারে তবে রং এ হোয়াইট পেষ্ট মিশ্রিত থাকলে ওয়াস টা কিছুটা খসখসে হয়ে যেতে পারে। তাই ভালো পরামর্শ হলো নিজেই একরামিন রং তৈরি করে নেওয়া।

ওয়াস পেইন্টিং প্রনালী:

যোকোনো ধরনের পেইন্ট করার জন্য প্রথমে কাপড়টা টানটান করে কোনো ফ্রেম বা কিছুর সাথে আটকে নিতে হবে।এতে করে পেইন্ট করতে সুবিধা হবে। কাপড়ের যে যায়গা গুলো ওয়াস দিতে হবে সেখানে আগে পানি স্প্রে করে  বা ব্রাস  দিয়ে সুবিধাজনক উপায়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। এমনভাবে ভেজানো যাবে না যাতে কাপড় থেকে টপটপ করে পানি পড়ে ব্লেন্ডিং নাও হতে পারে। এরপর ভেজা জায়গায় জলরং বা সুবিধাজনক যেকোনো পেইন্ট ব্রাস দ্বারা রং দিতে হবে। কাঙ্খিত কালার এর চেয়ে একটু গাড় করে রং দিতে হবে কারন শুকানোর পর হালকা হয়ে যায়। এধরনের  পেইন্ট  ড্রাই ওয়াস এ দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

Painted By Supto Sishir

একটু বেশি টেকশই করতে শুধু পানি দিয়ে কাপড় ভেজানোর পরিবর্তে পানির সাথে ৫-১০% এন.কে . এবং ৫-১০%  বাইন্ডার মিশিয়ে ঐ মিশ্রন দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে কাজ করা যায়। তবে এ পদ্ধতিতে পানিতে এন.কে. ও বাইন্ডারের পরিমাণ বেশি হলে কাপড় কিছুটা খসখসে হয়ে যেতে পারে। এবং কাপড়ে যে পর্যন্ত মিশ্রনটি দ্বারা ভেজানো হয়েছে সে পর্যন্ত রং দেওয়া না হলে হালকা একটা দাগ থেকে যেতে পারে দাগটা কিছুটা এরকম …কাগজে পানির ফোঁটা শুকালে যেমন হয় হালকা একটা দাগ পড়ে ঐরকম ই। কাছ থেকে বোঝা গেলেও দূর থেকে দেখে বোঝা যায় না।

# কয়েক ধাপে পেইন্ট করার প্রয়োজনীয়তা হলে ধাপগুলোর স্পষ্টতা বজায় রাখতে একধাপ শুকানোর পর ওয়াস দিতে হবে। অন্যথায় রং ছড়িয়ে মিশে যেতে পারে। যেমন আপনি যদি   মেইন সাবজেক্ট  আগে একে নিয়ে তারপর  ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়াস দিতে চান তাহলে আগে আঁকাটা ভালোভাবে শুকিয়ে তারপর ওয়াসটা দিতে হবে।

ডার্ক কালার কাপড়ে ওয়াস:

ওয়াস সাধারনত লাইট কালার কাপড়ে দেওয়া ভালো।লাইট কালার কাপড়ে রং ফোটাতে এবং বিভিন্ন কালার ভেরিয়েশন আনতে সুবিধা হয়। অপরদিকে ডার্ক কালার কাপড়ে  রং ফোটাতে হলে হোয়াইট পেষ্ট ব্যবহার করতে হয়। যার কারনে কাপড় হার্ড হয়ে যায়।

ওয়াস পেইন্টেড পোষাকের যত্ন:

১. পেইন্টেড পোষাক সাধারনত ড্রাই ওয়াস  করা সবচেয়ে ভালো । বিশেষ করে ওয়াস পেইন্টের পোষাক ড্রাই ওয়াস করার নিয়ম রয়েছে।

২. কাজ করার ৭-৮ দিনের মধ্যে না পরা উত্তম এবং ১৫-২০ দিনের মধ্যে না ধোয়া।

৩. ধোয়ার সময় শুধু পানি দিয়ে ধোয়া উত্তম। প্রয়োজনে  মৃদু ডিটারজেন্ট / শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. পেইন্টেড পোষাকে গরম পানি ব্যবহারে ধোয়া যাবে না কোনো অবস্থাতেই। এতে আপনার কাপড়ে পেইন্টিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৫ . পানিতে বা ডিটারজেন্ট এ ভিজিয়ে রাখা যাবেনা।

৬. পেইন্টিং নখ দিয়ে খুঁটা যাবে না। ধোয়ার সময় ব্রাস ব্যবহার অথবা ঘসা মাজা করা যাবে না।

৭. কাপড় উল্টো করে বাতাসে বা হালকা রোদে প্রচুর আলো বাতাস আছে এমন স্থানে শুকাতে হবে। কড়া রোদ পেইন্ট ও কাপড় দুটোর জন্য ক্ষতিকর।

৮. পেইন্ট এর উল্টো দিক থেকে মিডিয়াম-লো টেম্পারেচারে আয়রন করা।

৯. পারতপক্ষে বড় বড় ভাজ করে আলমারিতে হ্যাঙ্গারে  ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পেইন্টেড কাপড়ে পিঁপড়া ও তেলাপোকার উপদ্রব হয় অনেক সময়। এগুলো এড়াতে এবং কাপড় দীর্ঘদিন ভালো রাখতে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে নিম পাতা অথবা গোটা ন্যাপথালিন রেখে দেওয়া যেতে পারে।

১০. পেইন্টেড পোষাক প্রতিবার ব্যবহারের পর বাতাসে শুকিয়ে ভাঁজ করা উচিত এবং শখের পোশাক টি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে বছরে অন্তত এক দুই বার হালকা রোদ বাতাসে শুকিয়ে তুলে রাখা ।এতে পোশাক দীর্ঘ সময় ভালো থাকে।

এভাবে করে শখের হ্যান্ড পেইন্ট করা পোষাক টির যত্ন নিলে পোষাক টি দীর্ঘদিন নতুনের মতো চকচকে রাখা সম্ভব।

আশাকরি আমাদের আজকের আলোচনা আপনাদের ভালো লেগেছে ও উপকারে আসবে । সবার জন্য  অনেক শুভ কামনা। আমাদের সাথেই থাকুন। এবং  হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে আপনার যেকোনো জিজ্ঞাসা , আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

ধন্যবাদ 😊

Article Writer Supto Sishir

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *