Hand Painting

হ্যান্ড পেইন্ট করতে কি কি প্রয়োজন? কোথায় পাবো?

hand painted sharee

আজ আমাদের আলোচনার বিষয় হ্যান্ড পেইন্ট করতে কি কি প্রয়োজন এবং কোথায় পাবো? ইতি মদ্ধে আপনারা জানেন আমরা হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কথা বলে থাকি। আশাকরি আজকের আলোচনা আপনাদের অনেক বেশি কাজে আসবে। চলুন তাহলে শুরু করি।

হ্যান্ড পেইন্ট

হ্যান্ড পেইন্ট শব্দতেই এর পুরো মানে বা অর্থ বোঝা যাচ্ছে। হ্যান্ড মানে হাত আর পেইন্ট মানে আমরা সবাই জানি। পেইন্ট মানে সাধারণ অর্থে রং তুলির কাজ টাকেই আমরা বুঝি। আমাদের আজকের আলোচনায় হ্যান্ড পেইন্ট এর পাশাপাশি বিষয় হ্যান্ড পেইন্ট করতে কি কি প্রয়োজন এবং কোথায় পাবো তা নিয়েও আলোচনা করছি।

হ্যান্ড পেইন্ট হল -আপনি রং তুলি দিয়ে কোন কিছু আঁকবেন। কোন মেশিনে কিছু না। রং তুলি কে হাতের সাহায্যে যে কোন মাধ্যমে ব্যবহার করা মূলত হ্যান্ড পেইন্ট। এখন এই মাধ্যম কাগজ, ক্যানভাস, কাঠ, গ্লাস কিংবা কাপড় হতে পারে। এমন কি দেয়াল ও। অনেকে শখ করে রাস্তা কিংবা নিজের শরীর এ আঁকেন। মাধ্যম যাই হোক না কেন মূল হচ্ছে রং তুলি হাতের মাধ্যমে তার জাদু দেখাবে। হ্যান্ড পেইন্টড পোশাক এর চাহিদা দিনে দিনে বারছে। হ্যান্ড পেইন্টেড ড্রেস মানেই যেন অন্য রকম কিছু।

আমরা কাগজ বা অন্য মাধ্যম রেখে কি ভাবে কাপড় এ পেইন্ট মানে হাতে পেইন্ট করতে পারি, তা ই বিস্তারিত ভাবে জানবো।

hand paint panjabi and sharee
Painted By – শারমিন আক্তার আমেনা

হ্যান্ড পেইন্ট করতে কি কি প্রয়োজন

হ্যান্ড পেইন্ট কি তা তো জানলাম, এবার জানবো এটা করতে আমাদের কি কি লাগবে? 

১. কাপড়

২.  রং

৩. তুলি

৪. ফ্রেম

১. কাপড়

হ্যান্ড পেইন্ট করার জন্য আমরা প্রথমে মাধ্যম হিসেবে কাপড় নিব। এই কাপড় এ ও অনেক ধরন হয়। আপনি চাইলে সুতি, লিলেন, জর্জেট, হাফ সিল্ক, বা মসলিন নিতে পারেন। মসলিন এর দাম একটু বেশি। যারা আগে কখনও হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ করেন নাই, তারা আগেই দামি কাপড় এ না গিয়ে নরমাল যে কোন কাপড় এ একটু কাজ করে হাত পাকা করে তার পর মসলিনে কাজ করেত যাওয়া ভালো।  সুতি কাপড়ে  রং এক রকম করে কাজ করে, তো হাফ সিল্কে অন্য রকম। আবার মসলিনে তো পুরাই আলাদা।

 রং আপনি ভাল করে বানাতে পারলে যে কোন কাপড়ে ই মনের মত রঙের জাদু দেখাতে পারবেন।

তবে ভালো মানের কাপড়ে ভালো কাজ করা যায়।

২. রং

কাপড় এর পর আপনকে অবশই যে জিনিস নিতে হবে তা হল  রং।  রং ছাড়া তো আর আপনি হ্যান্ড পেইন্ট করতে পারবেন না। এখন আপনি যদি এক দম নতুন হন আপনি ভাবতে পারেন যে কোন  রং নিবেন। কোথা থেকে নিবেন? কি করবেন বুঝতে পারছেন না।

কি  রং নিবেন বললে আপনার জন্য ২ টা উপায় বলতে পারি। 

– এক্রেলিক কালার

– এক্রামিন কালার

এক্রেলিক কালার

এক্রেলিক কালার হচ্ছে একটা রেডি করা রং। যা কিনে আনার পর আপনি শুধু খুলবেন আর তুলির সাহায্যে কাপড়ে ব্যবহার করবেন। এটা ইন্ডিয়ান একটা  রং।  রং টা এমন ভাবেই বানানো যে আপনি শুধু বের করবেন আর আঁকবেন। এটি ব্যবহারে কোন নিয়ন নাই যে হাল্কা  রং এর কাপড় এ ফুটবে বা গাঢ়  রং এর কাপড়ে ফুটবে না।

যারা একেবারে নতুন আপনারা এই রং দিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। তবে হ্যান্ড পেইন্ট কে পেশা হিসাবে নিতে চাইলে এই রং এ কাজ না করা ই ভাল। কারন দাম বেশি আর এই টা দিয়ে কাজ করার অসুবিধা অনেক। এই টা নিয়ে বিস্তারিত পরে আলোচনা করব।

– এক্রামিন কালার

এবার বলি এক্রামিন কালার নিয়ে। আমাদের দেশে যারা হ্যান্ড পেইন্ট এর কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করেন, তারা এক্রিলিক এর সমস্যা গুলো যাতে না হয় সে জন্য কিছু কেমিক্যাল দিয়ে নিজেরা রং রেডি করে সেল করেন। যা কিনা এক্রাইলিক এর মত রেডি থাকে। আপনি এটা নিলে এক্রিলিক এর মত শুধু ঢালবেন আর তুলি দিয়ে কাপড়ে আঁকবেন। এখানে ও আপনি ২ রকম এর রং পাবেন। কিছু রং দিয়ে দেখবেন যে হালকা রং এর কাপড় এ কাজ করতে পারছেন। আবার কিছু রং গাঢ় যেমন কালো বা লাল রং এর কাপড় এ কাজ করতে পারছেন। ২ ধরন তা আপনাকে বুঝতে হবে।

তবে এটা দিয়ে কাজ করলে ও আপনার মন মত হবে না। খুব ভাল মানের কাজ করতে চাইলে আপনাকে নিজে রং তৈরি করা জানতে হবে।

একদম নতুন রা এই দুই টার যেকোনো একটা সংগ্রহ করে কাজ করতে পারেন।

আর আপনি যদি শুরুতে পেশাদারের মত নিজে রং বানিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে এই লেখার সব গুলো অংশ পড়বেন। তাহলে নিজেই ভালো মানের রং বানাতে পারবেন কাজ করার জন্য।

এখন শুধু বলি সে জন্য আপনাকে কি কি কেমিক্যাল নিতে হবে তাদের নাম।

সে জন্য আপনাকে যা যা নিতে হবে- বাইন্ডার, এন কে, নিউটেক্স, হোয়াইট পেস্ট, এপ্রিটন আরও কিছু।

৩. তুলি

কাপড় আর রং এর মত খুব দরকারি জিনিস হচ্ছে তুলি। যদিও তুলি ছাড়া ও আপনি হ্যান্ড পেইন্ট করতে পারবেন। তবে তার টেকনিক আলাদা। আমরা তুলি নিয়ে আলোচনা করবো। বাজারে আপনি অনেক রকম তুলি পাবেন। সেট আকারে। তবে আমি বলবো সেট না নিয়ে রং এর ধরন বুঝে আপনি তুলি কিনেন।

রং এর ধরন মানে রং এর ঘনত্ব। গাঢ় রং বা পাতলা রং 

তুলি ২ রকম নিতে পারেন। 

-ওয়াটার কালার 

-অয়েল কালার

যখন আপনি পাতলা রং ব্যবহার করে কাজ করবেন, তখন ওয়াটার কালার তুলি দিয়ে কাজ করবেন। এই তুলি গুলো রং অনেক বেশি ধরে রাখতে পারে। ফলে আপনি এক বার তুলিতে রং লাগানোর পর অনেকটা সময় কাজ করতে পারবেন। মসলিনে কাজ করতে খুব পাতলা রং লাগে, তখন আপনি এই তুলি দিয়ে কাজ করলে আপনার কাজ টা ভালো হবে।

আর যখন আপনি একটু ঘন রং দিয়ে কাজ করবেন, তখন আপনাকে অয়েল কালার তুলি দিয়ে করতে হবে। এর আশ গুলো ঘন বলে ঘন রং দিয়ে কাজ করতে আরাম হয়। মোটা কাপড় এ কাজ করতে গেলে ঘন রং লাগে। যেমন বিছানার চাদর এর কাপড় বা পর্দার কাপড়।

hand painting frame

৪. ফ্রেম

কাপড়, রঙ, তুলি সব নিলেন। কিন্তু রংকরার সময় কাপড় যেখানে রেখে কাজ করলেন, দেখলেন যে রং করা শেষ এ কাপড় টা যেখানে রেখে কাজ করেছেন, সেখানে লেগে যাচ্ছে বা আটকে গেছে। তুলতে গেলে অনেক সময় কাপড় টাই নষ্ট হয়ে যায়। কিংবা নিচে পেপার রেখে কাজ করলেন, পরে দেখলেন যে কাজ শেষে কাপড় এর নিচে রং এর সাথে পেপার লেগে আছে। তাহলে কি হল।  কষ্টের কাজ দেখে মন খারাপ।

এই সমস্যা গুলো যাতে না হয় সে জন্য আপনাকে যা করতে হবে ফ্রেম ব্যবহার করতে হবে। আপনার কাপড় অনুযায়ী আপনি ফ্রেম নিতে পারেন। যদি ছোট কাপড় হয়, তা হলে আপনি ১০ থেকে ১৮ বা ২০ ইঞ্চি সাইজ এর গোল বা চারকোণা ফ্রেম নিতে পারেন। আর শাড়ি বা বিছানার চাদর এর মত বড় কিছু তে কাজ করলে ৪ ফুট বাই ৪ ফুট কিংবা ৪ ফুট বাই ৫ ফুট কিংবা নিজের দরকার অনুযায়ী সাইজ এর ফ্রেম বানিয়ে নিতে পারেন।

হ্যান্ড পেইন্ট এর প্রয়জনিয় জিনিস কোথায় পাবো

এবার বলি হ্যান্ড পেইন্ট করতে যা যা লাগে সব জানলেন। তবে প্রশ্ন যে এই সব কিছু কোথায় পাবেন? কোথা থেকে কিনবেন? 

উত্তর সোজা। বই খাতা যে দোকান গুলো থেকে কিনেন, আপনি সেখানে পাবেন। সব ধরনের রং তুলি সাথে কেমিক্যাল ও। আর কাপড় তো আমরা সবাই ই জানি কই পাব। যেকোনো মার্কেট এ পেয়ে যাবেন যে কাপড় এ কাজ করতে চান। আর ফ্রেম ও বই খাতার দোকান কিংবা নিজে কাঠের দোকানে বানাতে পারেন। অথবা ব্লক বাটিক এর দোকান থেকে নিতে পারেন। হ্যান্ড পেইন্ট এর যাবতীয় জিনিস আপনি সেখানে পাবেন।

অথবা এখন সব চেয়ে সোজা অনলাইন থেকে কিনে নিতে পারেন। অনলাইন এ আপনি অনেক কে পাবেন যারা এক সাথে এই সব কিছু বিক্রি করেন। তবে অনেকে আছে শুধু রং নিয়ে ই কাজ করেন, আবার অনেকে ফ্রেম নিয়ে। কিংবা অনেকে শাড়ি নিয়ে। আপনি যেখান থেকেই কেনেন, খেয়াল রাখবেন আপনি যেন ভালো জিনিস গুলা ই কেনেন। রং ভালো না হলে আপনার কষ্টের কাজ শেষ, আবার কাপড় ভালো না হলে ও কষ্ট টা মাটি।আবার এমন ফ্রেম নিলেন যে আপনার কাপড় আটকানোর পর বার বার তা খুলে যাচ্ছে। সে জন্য যেখান থেকে যা ই নেন ভালো আর অরিজিনাল হ্যান্ড পেইন্টিং প্রডাক্ট টা নিবেন।

আশাকরি আমাদের আজকের আলোচনা আপনাদের ভালো লেগেছে। হ্যান্ড পেইন্ট করতে কি কি প্রয়োজন এবং কোথায় পাবো এই বিষয় নিয়ে আপনার কে কোন সমস্যা ও মতামত কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। সবার জন্য শুভ কামনা। আমাদের সাথেই থাকুন।

Blog Writer – শারমিন আক্তার আমেনা