সবাই কেমন আছেন। আজকে আমরা পোশাকে হ্যান্ড পেইন্টিং এর বিষয়ে ছোট্ট একটি খন্ড আপনাদের কাছে তুলে ধরবো। কিভাবে আপনি হ্যান্ড পেইন্টিং শুরু করতে পারেন।
হ্যান্ড পেইন্ট পোশাক কিঃ
হ্যান্ড মানে হাত, আর পেইন্ট মানে রং। হাত আর রঙ এর মাধ্যমে যে কাজগুলো করা হয় তাকে বলা হয় হ্যান্ড পেইন্টিং। … নির্দিষ্ট জিনিসের ওপর মনের মাধুরি মিশিয়ে আঁকিবুঁকি করার নামই হ্যান্ড পেইন্ট। রং তুলির সাহায্যেই মূলত কাজটি করা হয়।
যারা কিছুটা শিল্পমনা এবং ভিন্ন ধরনের পোশাক পরতে ভালোবাসেন তাদের কাছে হ্যান্ড পেইন্ট করা পোশাকের কদরই আলাদা। সুতার কাজ, চুমকি বসানো, অ্যাপ্লিক ইত্যাদির মতোই হ্যান্ড পেইন্টও এক ধরনের হাতের কাজ। শিল্পীর ভালোবাসা, ধৈর্য্য এবং তার পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে একটি পোশাকে ফুটে ওঠে তার কল্পনাগুলো।
![](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/Hand-painted-shari-1.jpg)
হ্যান্ড পেইন্ট পোশাকের ইতিহাসঃ
কাপড় তৈরির অনেক আগে মানুষের শরীরে পেইন্ট করার প্রচলন ছিল। তখন গুটিকয়েক রঙ দিয়ে শরীরের নানা ধরনের চিত্র আঁকা হতো। পরবর্তী সময়ে কাপড়ের আবিষ্কার হলে কাপড়ে রঙ করার প্রচলন সৃষ্টি হয়। মধ্যপ্রাচ্যে কাপড়ের রঙ করার প্রচলন তিন হাজার বছরের পুরনো।
এশিয়ার মধ্যে ভারতবর্ষে দেবদেবীর চিত্রকর্ম থেকে প্রভাবিত হয়ে কাপড়ে চিত্রকর্ম আঁকার প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের পর সেগুলো ইউরোপ ও আফ্রিকায় রপ্তানি শুরু হয়।
প্রায় দুই হাজার বছর আগে হ্যান রাজত্বকালে চীনে হ্যান্ড পেইন্টিংয়ের প্রচলন শুরু হয়। তার আগে থেকেই চিনে ব্লক প্রিন্টের প্রচলন ছিল। রেশম বা মসলিন কাপড়ে হ্যান্ড পেইন্টের খুবই সমাদর ছিল সেসময়। তবে চীনাদের পোশাকে শুধু কালো রঙের ক্যালিগ্রাফি পেইন্ট করা হতো। চীনাদের থেকে জাপানিরা হ্যান্ড পেইন্টের কৌশল আয়ত্ব করে। জাপানিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কিমোনোতে হ্যান্ড পেইন্টের প্রচলন রয়েছে।
আমেরিকাতে আশির দশকে সেলিব্রেটি শিল্পীদের পোশাকে হ্যান্ড পেইন্ট করে বিখ্যাত হন শিল্পী ব্যারন। পরে তিনি হ্যান্ড পেইন্ট পোশাকের একটি কারখানা তৈরি করেন। যুক্তরাজ্যে পোশাকে হ্যান্ড পেইন্টকে জনপ্রিয় করে তোলেন তরুণ শিল্পী হলি ফওলার্স। সেসময় তার পোশাক মানুষের মাঝে এক ধরনের ইল্যুশন তৈরি করে। ফ্রান্সেও হ্যান্ডপ্রিন্টের জোয়ার লাগে তখন। ফ্রান্সে লেদার হ্যান্ড পেইন্ট বেশ জনপ্রিয়।
![](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-painted-dress.jpg)
মিশরের সভ্যতায় রেখাচিত্র বিভিন্ন আকৃতিতে এক সাথে প্রলেপ করে রঙ করা হতো। রোমান বা গ্রিক শিল্প দিয়ে প্রভাবিত হয়ে তৈরি করে পোম্পেই হাকুলিয়ান। ধীরে ধীরে চিত্রকর্ম কাঠ, কংক্রিট, দেয়াল থেকে কাপড়ে আসে। কাপড় আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ শরীরে আঁকত। তাকে উল্কিচিত্র বর্তমানে বলা হয় ট্যাটু। তা বিভিন্ন মোহর পুড়িয়ে ছাপ দেওয়া বা ছুরি ধারালো বস্তু দিয়ে শরীরে দেবদেবীর চিত্র আঁকা হতো। কাপড় আবিষ্কারের পর প্রথম দিকে তা যেভাবে বোনা হতো, তাই জড়ানো হলেও পরবর্তী সময়ে তা রঙিন করা হতো রঙে চুবিয়ে। তবে আর্ট আসে বহু পরে, মধ্যপ্রাচ্যে কাপড়ে রঙ করার প্রচলন তিন হাজার বছর পূর্ব থেকে শুরু।
প্রায় ২ হাজার বছর পূর্বে এশিয়ার চীনে হ্যান রাজত্বকালে হাতে আঁকা পোশাকের শুরু হয়। তার আগে থেকে যদিও ব্লক প্রিন্ট করা হতো, তবে তখন শুধু কালো রঙের ক্যালিওগ্রাফি করা হতো।
চীন থেকে জাপানিরা হ্যান্ড পেইন্টিং শিখে তারা তাদের কিমোনোতে হাতে আঁকত। তবে ধারণা করা হয়, ভারতবর্ষের দেবদেবীর চিত্রকর্ম থেকে হাতে আঁকা পোশাকের চিত্রকর্ম শুরু হয়। পরে গ্রিকবীর আলেকজেন্ডারের আক্রমণের পর তা ইউরোপ আমেরিকায় যায়। আমেরিকায় আশির দশকে শিল্পীদের পোশাকে হ্যান্ড পেইন্ট করে আলোচিত হন শিল্পী ব্যারন। যুক্তরাজ্যে হাতে আঁকা পোশাকে জনপ্রিয় করে তোলেন হলিফওলাস। তার পর ফ্রান্সের জোয়ার আসে। তবে বাংলাদেশে হাতে আঁকা পোশাকের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন প্রয়াত শাহরুখ শাহীদ।
যেসব ডিজাইন পোশাকে পেইন্ট করা হয়ঃ
হাতে আঁকা পোশাকে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃশ্য, ফুল, পাখি, নানা রকম বিষয়বস্তু নিয়ে আঁকা হয়। তবে এখন রেখাচিত্র, ক্যালিওগ্রাফি, ডুডলিংআলপোনা, মানডালা, লোকচিত্র, রিকশাপেইন্ট, বিমূর্ত চিত্র, পটচিত্র ইত্যাদি মোটিফে তুলে ধরা হয়।
যেসব ডিজাইন পোশাকে পেইন্ট করা হয়ঃ
হাতে আঁকা পোশাকে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃশ্য যেমন-
ফুল, পাখি ও নানা রকম বিষয়বস্তু নিয়ে আঁকা হয়। তবে এখন রেখাচিত্র, ক্যালিওগ্রাফি, ডুডলিংআলপোনা, মানডালা, লোকচিত্র, রিকশাপেইন্ট, বিমূর্ত চিত্র, পটচিত্র ইত্যাদি মোটিফে তুলে ধরা হয়।
হ্যান্ড পেইন্টিং ব্যবহৃত কাপড়ঃ
হাতে আঁকা পোশাক তৈরি সময়সাপেক্ষ যদিও, তবে তা নির্ভর করে ফ্রেব্রিক্স ও ডিজাইনের উপর। বর্তমানে হ্যান্ডলুমে হাতে আঁকা পোশাক খুব জনপ্রিয়। জামদানি মসলিন, সিল্ক, মটকা, তাত, টিসু, সুতি, খেশ, খাদি কাপড়ে হাতে আঁকা হয়। তা দিয়ে নানা রকম বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি করা হয়। যেমন- কূর্তি কামিজ, থ্রিপিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বেবিড্রেস। তাছাড়া ঘরের বিছানার চাদর থেকে শুরু করে টেবিল ম্যাট, চেয়ার কভার কুশন কভার, পর্দায়ও আঁকা হয়।
হ্যান্ড পেইন্টিং ব্যবহৃত কাপড়ঃ
হাতে আঁকা পোশাক তৈরি সময়সাপেক্ষ যদিও, তবে তা নির্ভর করে ফ্রেব্রিক্স ও ডিজাইনের উপর। বর্তমানে হ্যান্ডলুমে হাতে আঁকা পোশাক খুব জনপ্রিয়।
- জামদানি
- মসলিন
- সিল্ক
- মটকা
- তাত
- টিস্যু
- সুতি
- খেশ
- কটন
- খাদি কাপড়ে হাতে আঁকা হয়।
হাতে আঁকা কাপড় দিয়ে নানা রকম বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি করা হয়। যেমন-
- কূর্তি
- কামিজ
- থ্রিপিস
- শাড়ি
- পাঞ্জাবি
- ফতুয়া
- বেবিড্রেস। তাছাড়া ঘরের বিছানার চাদর থেকে শুরু করে টেবিল ম্যাট, চেয়ার কভার কুশন কভার, পর্দায়ও আঁকা হয়।
![](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-painted-panjabi.jpg)
কিভাবে পোশাকে হ্যান্ড পেইন্টিং শুরু করবেনঃ
হাতে আঁকা পোশাক, আর ক্যানভাসে আঁকা খানিকটা ভিন্ন। তবে চিত্রকর্মের ক্ষেত্রে কাগজের জন্য জল রঙ, ব্যানার বা পোস্টারের জন্য পোস্টার কালার, ক্যানভাসের জন্য এক্রেলিক কালার আছে। তেমনি পোশাকে আঁকার জন্য আালদা রঙ আছে। এই রঙগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া দিয়ে তৈরি। বাজারে হ্যান্ড পেইন্টের নানারকম রেডিমেড রঙ পাওয়া যায়। যেমন ফেব্রিকলি এক্রেলিক কালার। তবে যারা প্রফেশনালি হাতে আঁকা পোশাক নিয়ে কাজ করে তারা রঙ বানিয়ে নেয় নানা রকম উপাদান দিয়ে। পোশাকে আঁকার জন্য ফ্রেম পাওয়া যায় বাজারে। তাছাড়া ফ্রেমগুলো অর্ডার দিয়ে তৈরি করে নেওয়া হয় প্রয়োজন মতো।
প্রথমে কাজ শুরু করতে আপনি খুব ছোট কাপড়ের টুকরো বেছে নিতে পারেন। দুর্ভাগ্যবশত যদি কাজটা নষ্টই হয়ে যায়, অল্প ক্ষতি হবে! স্কার্ফ বা টি-শার্ট, এগুলো আদর্শ ক্যানভাস আপনার প্রথম ফেব্রিক পেইন্টিংয়ের পাঠে।
পোশাকে হ্যান্ড পেইন্টিং শুরু করতে কি কি লাগে –
ফেব্রিক পেইন্টিং করতে অ্যাক্রিলিক রঙ ও এক্রামিন রঙ-
১. রঙ- এটা তো অবশ্যই লাগছে। ফেব্রিক পেইন্টিংয়ে ব্যবহার করা যাবে অ্যাক্রিলিক রঙ অথবা এক্রামিন রঙ।
২. মিডিয়াম– সঠিক ঘনত্বের রঙ পেতে রঙের সাথে মিডিয়াম মিশিয়ে নিতে হবে। বাটিতে সামান্য মিডিয়াম নিয়ে তাতে রঙ মেশাতে থাকবেন অল্প করে।
৩. কাপড়- যেমনটা বলেছি, শুরুর দিকে ছোট কাপড়ের টুকরো নিয়ে কাজ করুন। নতুন কাপড় না নিয়ে পুরনো কাপড়েই আঁকিবুকি করুন প্রথম প্রথম। কাপড়টা অবশ্যই ভালো মতো ধুয়ে শুকিয়ে নেয়া লাগবে।
ফেব্রিক পেইন্টিং করতে তুলি –
৪. তুলি বা ব্রাশ- চিকন তুলি না মোটা তুলি দরকার হচ্ছে, তা নির্ভর করে নকশার উপর। সূক্ষ্ম কাজ করার বেলা সবসময় চিকন তুলিই প্রয়োজন হয়। নকশা চওড়া হলে মোটা তুলি ব্যবহার করুন।
যেভাবে আঁকবেন
টি-শার্টে ফেব্রিক পেইন্টিং –
কাপড়ের গায়ে আঁকার রয়েছে নানা রকম উপায়। প্রচলিত সহজ উপায়ই বেছে নেয়া ভালো প্রথম বার আঁকার ক্ষেত্রে।জিনিসপত্র নিয়ে বসার পর কিন্তু কাজ তেমন কঠিন কিছু নয়। ইচ্ছে মতো রঙ মিশিয়ে আঁকতে থাকুন! যাই আঁকতে চলেছেন, যতো সহজই নকশা হোক তা, কাঠ পেনসিলে এঁকে নিন আগে। কাপড়ে আঁকিবুকি করার অভ্যাস না থাকলে শুরুতেই রঙ নিয়ে কাজ করতে যাবেন না। নকশা আঁকা হয়ে গেলে রঙ নিয়ে বসুন। বাটিতে খানিক রঙ নিয়ে আগে মিডিয়ামের সাথে মিশিয়ে নিন।রঙের ঘনত্ব সঠিক পাওয়া গেলে তবে কাপড়ে আঁকা নকশার গায়ে রঙের আঁচড় কাটা শুরু করুন। মূল কাজ এখানেই শেষ! তবে পুরোটা কিন্তু শেষ হয়ে যায় নি। তারপরেও আরো কিছু করার আছে আপনার। কাপড়টাকে পুরো একদিন শুকোতে দেবেন। দিন তিনেক পানি লাগাবেন না কাপড়ে।
জেনে নিন হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ির সংরক্ষণের কিছু ঘরোয়া নিয়ম:
- কাপড়কে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে নিমপাতা।
- নিমপাতা ভালোভাবে শুকিয়ে হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে রেখে দিতে হবে
- কড়া রোদ কাপড়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর, তাই সম্ভব হলে হালকা রোদে অথবা যেখানে প্রচুর আলো বাতাস যাওয়া আসা করে সেখানেই হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি শুকনো ভালো
- মসলিন, সিল্ক, হ্যান্ডলুম কটনসহ সব ধরনের আঁকা শাড়ি ড্রাই ওয়াশ করে নিলে দীর্ঘ দিন নতুনের মতো থাকবে।
- হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি বারবার না ধোয়াই ভালো, যদি একান্তই বাড়িতে ধুতে হয় তাহলে কম ক্ষারযুক্ত লিকুইড ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে তাছাড়া শ্যাম্পু ব্যবহার করাই ভালো
- সরাসরি আয়রন করা যাবেনা, উল্টো পিঠে অথবা পাতলা কাপড় হ্যান্ড পেইন্ট কাপড়ের ওপর রেখে আয়রন করতে হবে
- নতুন হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি কেনার পর কয়েক দিন হালকা রোদে শুকাতে হবে
- প্রতিবার ব্যবহারের পর শাড়ি বাতাসে না শুকানো পর্যন্ত ভাঁজ করা যাবে না
- দুই মাসে একবার অথবা কমপক্ষে বছরে দু’বার শাড়ি বের করে আলো বাতাসে রাখুন পুরো দিন
খুব সাধারণভাবে এই নিয়মগুলো মানলেই পছন্দের হ্যান্ড পেইন্ট শাড়িটি ভালো থাকবে দীর্ঘদিন।
সবচেয়ে জরুরি কাজ, যদি ফেব্রিক পেইন্টিং করে ভালো লেগে থাকে, তবে প্রায় সময়ই আঁকার চর্চা করুন। শখের কাজ ছাড়তে নেই। কে বলতে পারে শখটাই কখন কার পেশায় বদলে যায়!
Blog Writer: Suvro Barai