কেমন আছেন? ইতোমধ্যে আপনারা জেনে গেছেন যে, আমারা আমাদের ওয়েবসাইটে হ্যান্ড পেইন্ট এর সকল বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আজ আমরা হ্যান্ড পেইন্ট এর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা বলব।
হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কিছু কথা-
বর্তমানে হ্যান্ড পেইন্টের পোষাকের জনপ্রিয়তা শীর্ষে।
একটা সময় ছিল যখন পোশাকে হাতের কাজ বলতে শুধু সুঁই-সুতার নকশাকে বোঝানো হতো। তবে এখন শুধু সুঁইয়ের খোঁচায় আর সুতার রঙয়ে বোনা ফুল অথবা এমব্রয়ডারী করা পাখি কিংবা ব্লকের বাহারি নকশা করা শাড়ি নয়, কাপড়ের সৌন্দর্য বর্ধণ করতে রং তুলির জনপ্রিয়তাও কম নয়।
শিল্পীর রং আর তুলির স্পর্শে বর্ণিল হয়ে ওঠে শরীরে জড়িয়ে থাকা পোষাক। শিল্পীর আঙুল আর তুলির প্রতিটি আঁচড় নিছক কোনো দাগ কেটে যাওয়া নয় বরং তাতে মিশে থাকে ধৈর্য, শ্রম, ভালোবাস, স্বপ্ন ও মায়া।
![hand paint dress product](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-paint-dress.jpg)
পেইন্ট পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ছোট, বড়, বয়স্ক সবাই যেন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে শিল্পীর হাতে ছোয়ায় তৈরি চিত্র কর্ম দেখে।
বর্তমান সময়ে পোশাকের তালিকায় বিশেষ স্হান দখল করে আছে হ্যান্ড পেইন্ট ড্রেস। মেয়েদের হিজাব থেকে শুরু করে কুর্তি, ওড়না এবং শাড়ি তে রং তুলির কারুকার্য চোখে পড়ার মতো। বাদ যায়নি পুরুষদের পোশাকও। হ্যান্ড পেইন্ট জায়গা করে নিয়েছে ছেলেদের টি-শার্ট, পান্জাবিতেও।
এছাড়াও চারদিকে মাস্ক এর ব্যবহার যেমনি বেড়েছে তেমনি মাস্কের মধ্যেও রং-বে রঙের হাতে আঁকা পেইন্টিংও বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
হ্যান্ড পেইন্ট কি?
হ্যান্ড মানে হাত আর পেইন্ট মানে রঙ।
আমার মতে, শব্দ এখানে দুটি হলেও মূলত তৃতীয় আর একটি বস্তুকে কল্পনা করে নিতে হবে, Paint Brush অর্থাৎ তুলি। এ তিনটির সমন্বয়ে যে কাজ সম্পন্ন হয় তাকেই হ্যান্ড পেইন্ট বলে।
হ্যান্ড পেইন্ট কিভাবে করে?
রং তুলির সাহায্যে কাপড়/ক্যানভাস/ কাঠ/ যেকোনো নির্দিষ্ট জিনিসের উপর হাতের সাহায্যে আঁকাআকি করাই প্রধান কাজ।
কাপড়ে হ্যান্ড পেইন্ট করতে কি কি লাগে?
প্রথমেই বলে নেই হ্যান্ড পেইন্টিং করতে চাইলে অবশ্যই আপনার আর্টের উপর দক্ষতা থাকতে হবে।
দ্বিতীয় আপনাকে অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে। পেইন্টের কাজ মানেই অনেক সময় নিয়ে নিখুঁত ভাবে কাজটি আপনাকে শেষ করতে হবে। এরজন্য অনেক ধৈর্য থাকতে হবে
তুলি-
ডিজাইনের উপর নির্ভর করে চিকন তুলি অথবা মোটা তুলি দরকার হবে। সূক্ষ্ম ডিজাইন করার সময় চিকন তুলি এবং চওড়া ডিজাইনের ক্ষেত্রে মোটা তুলির ব্যবহার হয়।
রঙ-
হ্যান্ড পেইন্টিং এর জন্য ২ ধরনের রং পাওয়া যায়
- অ্যাক্রেলিক
- এক্রামিন.
ফ্রেম-
কাপড়ে পেইন্ট করার জন্য ভালো ফ্রেম অবশ্যই দরকার। ফ্রেম ছাড়া কাপড়ের উপর পেইন্ট করা অনেক কষ্টকর।
কাপড়ে পেইন্ট করার রং-
রঙ ২ ধরনের
অ্যাক্রেলিক ও এক্রামিন
এক্রামিন রং আবার ২ ধরনের পাওয়া যায়……
১। রেডি এক্রামিন
২। ডিরেক্ট/র এক্রামিন কালার /ব্লকের রং বললেও হবে
ব্লকের রং/ র কালারকে কাপড় ভেদে ক্যামিকেল মিশিয়ে হ্যান্ড পেইন্টের জন্য প্রস্তুত করতে হয়।
ব্লকের কাজে যে রং ক্যামিকেল গুলো ব্যবহার করা হয় সে গুলোই মূলত হ্যান্ড পেইন্টিং করার জন্যও ব্যবহৃত। এর মধ্যে রয়েছে বাইন্ডার, এনকে, হোয়াইট পেস্ট, নিউটেক্স, এপ্রিটন, ওক্সাল, M-60, F-50, ইত্যাদি…… & এক্রামিন কালার/ র কালার।
ক্যামিকেল গুলোর কাজ-
চলুন জেনে আশি ক্যামিকেল এর কাজ গুলো।
বাইন্ডারঃ
এটি মূলত এক প্রকার আঠা। যা রং কে দীর্ঘ স্থায়ী করতে সহায়তা করে। বাইন্ডারের ঘনত্ব কিছুটা ভাতের মারের মত হয়ে থাকে।
এনকেঃ
এনকে এর ঘনত্ব বাইন্ডারের থেকে কিছুটা পাতলা। এটি ব্যবহারে রং এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে৷ কোনো রং যদি বেশি ভারি হয়ে থাকে তাহলে কিছু পরিমান এন কে মিশিয়ে রং পাতলা করা যায়। এতে কাজ গুলো অনেক সফট দেখায়।
হোয়াইট_পেস্টঃ
ডার্ক কালারের কাপড়ে পেইন্ট করার সময় কাজ গুলো ফুটিয়ে তোলার জন্য এনকে, বাউন্ডারের সাথে হোয়াইট পেস্ট মিক্সিড করে কাজ করতে হয়। নয়তো কাজটা মরে যায়।
![hand paint dress](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-paint-product-768x1024.jpg)
নিউটেক্সঃ
বলাকা সিল্ক, জর্জেট কাপড়, যেকোনো সিল্ক কাপড়, মসলিন, খাদি, ভয়েল এসব কাপড়ে পেইন্ট করার জন্য নিউটেক্স দিয়ে রং বানাতে হয়।
- নোটঃ নিউটেক্স & হোয়াইট পেস্ট কখনো একসাথে মিশিয়ে রং তৈরী করা যাবে না।
এপ্রিটনঃ
এপ্রিটন ও এক প্রকার আঠা।
কোনো কাপড়ে রং ছড়িয়ে গেলে কিছুটা এপ্রিটন মিশিয়ে নিলে রং আর ছড়াবে না।
ওক্সালঃ
এটি এমন একটি ক্যামিকেল যা রং কে উজ্জ্বল করে।
M-60/F-50: গোল্ডেন / সিলভার আফসান তৈরী করতে বাইন্ডার, একে এর সাথে M-60/F60 মিক্সিড করতে হয়।
রংঃ এই ক্যামিকেল গুলোর সাথে পরিমান মত এক্রামিন কালার মিশিয়ে পছন্দ মত রং বানিয়ে নিতে হয়।
হ্যান্ড পেইন্টে কালার মিক্সং পদ্ধতি-
ভিন্ন ভিন্ন কাপড়ের জন্য কালার মিক্সিং টা ও ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন।
সুতি/লিলেন কাপড়ের জন্য-
বাইন্ডার ২ চামচ +
এনকে ১ চামচ+
রং পরিমান মতো।
- যদি ডার্ক সুতি/ লিলেন কাপড়ে পেইন্ট করতে চান তাহলে উপরের ক্যামিকেলের সাথে ৪ চামচ হোয়াইটপেস্ট নিতে হবে।
হাফসিল্ক, বলাকা, জামদানি, সিল্ক এই কাপড় গুলোর জন্য-
২ চামচ এনকে +
২ চামচ বাইন্ডার+
হাফ চামচের এপ্রিটন+
পরিমান মতো রং।
![Hand Paint sharee](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-paint-dress-1.jpg)
হ্যান্ড পেইন্টে অ্যাক্রিলিক রং এর_ব্যবহার-
যদিও অ্যাক্রেলিক রং দিয়ে সরাসরি কাপড়ে পেইন্ট করা যায়, তবে কাজটা খুব একটা সফ্ট হয় না। এর জন্য অ্যাক্রিলিক রং এর সাথে বাইন্ডার এনকে মিশিয়ে কাজ করলে কাজটা সফ্ট হবে।
বাইন্ডার ১চামচ
এনকে ১ চামচ
পানি ২ চামচ
এপ্রিটন হাফ চামচ
পরিমান মত অ্যাক্রেলিক রং
যদি কেউ একদম নতুন হয়ে থাকে। হ্যান্ড পেন্টের কিছুই জানা না থাকে তাহলে……..
মিডিয়া নামে এক ধরনের ক্যামিকেল পাওয়া যায়। সেটা দিয়েও অ্যাক্রিলিকের রং টা পাতলা করে কাজ করা যাবে।
ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়াসের জন্য কালার মিক্সেং-
সম পরিমান এনকে+ বাইন্ডার & আপনি যে কালার টি করতে চান সেই রং পরিমাণ মত মিশিয়ে নিবেন৷ আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে আমি নিচে পরিমান বলে দিলাম। এই অনুপাতে প্রয়োজনে বেশি করে রং বানিয়ে নিতে পারবেন।
১ চামচ পরিমান বাইন্ডার
১ চামচ এনকে
পরিমাণ মত এক্রামিন রং
ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়াশ দেয়ার টেকনিক-
প্রথমে কাপড়টি টান টান করে ফ্রেমে আটকিয়ে, কাপড়ের যে অংশে ব্যাকগ্রাউন্ড কালার করতে চান সেখানে চ্যাপ্টা ব্রাসের সাহায্যে পানি দিয়ে আগে ব্রাস করবেন । তারপর তৈরীকৃত রং টি তুলি দিয়ে ভেজানো অংশে ব্রাস করে নিবেন।
রংটি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যাবে।
হ্যান্ড পেইন্ট কাপড়ের যত্ন –
![how to care hand paint dress](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-painted-panjabi--1024x768.jpg)
কোনো কাপড়কে যখন রং তুলির আঁচড়ে সযত্নে বর্নিল করে তোলা হয় তাতে কিন্তু হাজার ও ধৈর্য ও সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। প্রত্যেকটা কাজ নিখুঁত করার জন্য একজন শিল্পি যখন পেইন্ট করেন তখন অনেক যত্ন সহকারে কাজ টা করে থাকেন।
শুধু পেইন্ট করলেই যে কাজ শেষ তা কিন্তু নয়। এই শখের ডেস্টটি যদি আপনি যত্ন না করেন তাহলে কিন্তু সেটি খুব সহযেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আসুন জেনে নেই আমরা কিভাবে হ্যান্ড পেইন্ট কাপড়ের যত্ন নেব।
নতুন হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি কেনার পর কয়েক দিন হালকা রোদে শুকাতে হবে।
হ্যান্ড পেইন্টেড কাপড় সরাসরি আয়রন করা যাবেনা, উল্টো পিঠে আয়রন করতে হবে।
পেইন্ট করার পর ১৫-২০ দিন আগে না ধোয়াই ভালো। ধোয়ার জন্য অতিরিক্ত ক্ষার যুক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যাবে না।
দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে ভিজিয়ে রাখা যাবে না।
হ্যান্ড পেইন্ট কাপড় কখনোই গরম পানিতে ধোয়া যাবে না।
মসলিন কাপড় হলে ড্রাই ওয়াস করতে হবে।
প্রতিবার ব্যবহারের পর বাতাসে একটু শুকিয়ে নিয়ে ভাজ করে রাখবেন।
দুই মাসে একবার অথবা কমপক্ষে বছরে দু’বার শাড়ি বের করে আলো বাতাসে রাখুন পুরো দিন।
কড়া রোদে না শুকানোই ভালো। রোদের প্রখর আলো রঙ নষ্ট করে দেয়।
হাতে আঁকা শাড়ি বা পোশাক খুব বেশি আঁটসাঁট করে ভাঁজ করা যাবে না। হালকা ফুলকোভাবে ভাঁজ করতে হবে।
মনে রাখবেন যে জিনিস আপনি বেশি যত্ন করবেন তা বেশি দিন ভালোও থাকবে। খুব সাধারণভাবে এই নিয়মগুলো মানলেই পছন্দের হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি বা কাপড়টা ভালো থাকবে দীর্ঘদিন।
আশা করছি তথ্য গুলো আপনাদের কাজে লাগবে। আর যারা নতুন আছেন তাদের জন্য হ্যান্ডপেইন্ট এখন অনেক সহজ মনে হবে। যদি আপনার আর্টের দক্ষতা ভালো হয়। তাহলে আপনি চাইলে আপনার শখের ড্রেসটি এভাবে পেইন্ট করতে পারেন সেই সাথে হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা
Blog Weiter : Rokshana Zaman
One thought on “হ্যান্ড পেইন্ট এর খুঁটিনাটি”