আমারা সবসময় হ্যান্ড পেইন্ট এর বিষয় গুলো নিয়ে কথা বলে থাকি। ধারাবাহিক ভাবে আজ আমরা কথা বলবো হ্যান্ড পেইন্ট ও হ্যান্ড পেইন্ট করার নিয়ম এই বিষয় গুলো নিয়ে। আশাকরি আজকের আলোচনা আপনাদের অনেক বেশি কাজে আসবে।
কাপড় তৈরি তখনো শুরু হয় নি। পেইন্টিং এর জন্য বেছে নেয়া হতো মানুষের শরীর,পাথর, গাছের পাতা কিংবা পশুর চামড়াতে। রং হিসেবে ব্যবহৃত হত ফলের রস,গাছের ছাল,আঠা,পানি ইত্যাদি।
পুই শাকের বিচি পেকে গেলে ছোট বেলায় অন্যের গালে লাগাতাম। মা সাবধান করত কাপড়ে যেন না লাগে। এই গুলোই কিন্তু কাপড়ে রং করার কাজে ব্যবহৃত হত আগে।
আজ যেমন কেমিক্যাল দিয়ে ইচ্ছেমতো রাঙাই কাপড় আগে সব কিছু ছিল প্রাকৃতিক।
মানব সভ্যতার ক্রমোন্নতির ধারাবাহিকতায় প্রাচীন সেই আঁকিবুঁকি পেয়েছে এক অন্য মাত্রা। একেই এখন আমরা হ্যান্ড পেইন্ট বলে থাকি। শিল্পী তার মানস পটে ধারনকৃত সৌন্দর্য তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন ক্যানভাসে।
![Hand painted panjabi](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-painted-panjabi-1-1.jpg)
হ্যান্ড পেইন্ট এর ইতিহাস
নান্দনিকতা, সৌন্দর্যের গুন মানুষ পেয়েছে সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই।তাই যখন সামনে যা পেয়েছে তা হোক সামান্য পাথর কিংবা গাছের পাতা রাঙিয়ে নিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের কাপড়ে রঙ করার প্রচলন প্রায় তিনহাজার বছরের পুরোনো।
সেটা প্রায় তিনহাজার বছর আগেকার কথা। হ্যান রাজত্ব কালে চীনে শুরু হয় হ্যান্ড পেইন্টিং। ব্লক প্রিন্টের প্রচলন তার আগে থেকেই ছিল।
রেশম বা মসলিনে হ্যান্ড পেইন্ট এর দারুন কদর ছিল তখন। তবে চীনাদের পোশাকে শুধু ক্যালিওগ্রাফি করা হতো।
চীনা দের থেকে জাপানীরা হ্যান্ড পেইন্ট এর কৌশল রপ্ত করে। কিমানো,জাপানীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এতে রয়েছে হ্যান্ড পেইন্ট এর ছোঁয়া।
আমেরিকায় আশির দশকে সেলিব্রেটি শিল্পী দের পোশাকে হ্যান্ড পেইন্ট করে বিখ্যাত হন শিল্পী ব্যারন। হ্যান্ড পেইন্ট পোশাক এর একটা কারখানাও ছিল তার।
যুক্তরাজ্য এর তরুন শিল্পী হলি ফওলার্স পোশাকে হ্যান্ড পেইন্ট কে জনপ্রিয় করে তোলেন। পোশাকে হ্যান্ড পেইন্ট মানুষের মাঝে এক ধরনের ইল্যুশন তৈরি করে।ফ্রান্সে লেদার পেইন্ট বেশ জনপ্রিয়।
এশিয়ার মধ্যে আমাদের ভারতবর্ষে দেবদেবীকে চিত্রকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার প্রচলন রয়েছে। সেখান থেকে প্রভাবিত হয়ে কাপড়ে চিত্র আঁকার প্রচলন শুরু হয়।
আমাদের দেশে হ্যান্ড পেইন্ট কে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা প্রদানে অবদান রেখেছেন প্রয়াত ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ শহীদ।
হ্যান্ড পেইন্ট এর ক্ষেত্র
হ্যান্ড পেইন্ট বলতে আমাদের অনেকের মাথায় প্রথমেই আসে ক্যানভাসের নাম। তবে বর্তমান সময়ে আঁকাআকি শুধু ক্যানভাসে থেমে নেই।
আকার জন্য শিল্পীর খুজে নেন অনেক উপকরণ।
পোশাকে হ্যান্ড পেইন্ট বর্তমান সময়ে ভীষণ জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে কাঠ,গয়না, মগ,টিব্যাগ ইত্যাদি।
এমনি কি ডিমের খোসায় ও পেইন্ট করা হয়।
হ্যান্ড পেইন্ট এর প্রয়োজনীয় জিনিস
আগে যেমন ফল,লতা পাতা,বাকল দিয়ে রঙ করা হতো এখন তো তেমন না। এখন আধুনিক যুগ। আধুনিক সরঞ্জাম।
নানা ধরনের ক্যামিকেল আর প্রয়োজন মাফিক তুলি,হ্যান্ড পেইন্ট এ এসেছে নতুনত্ব।
নানা রঙের সম্মেলনে ফুল হোক পাতা,গাছ হোক কিংবা কোন দৃশ্য যেন জীবন্ত রুপ ধারণ করে।
![hand painting accessorize](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-painting-accosorize-.jpg)
হ্যান্ড পেইন্ট করার নিয়ম
হ্যান্ড পেইন্ট করার নিয়ম নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক কথা চলে আসে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক । হ্যান্ড পেইন্ট এর জন্য প্রধানত ২ ধরনের রং ব্যবহার করা হয়
১. এক্রলিক কালার
২. এক্রমিন কালার
এক্রলিক কালার পদ্ধতিঃ
যারা একেবারে নতুন তাদের জন্য এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে উপযোগী। বাজারে পাওয়া যায় যে সব নামি-দামি ব্রান্ডের এক্রলিক ফেব্রিক কালার তা সরাসরি কাপড়ে ব্যবহার উপযোগী। এ রঙের সাথে কোন কিছু মিশানোর প্রয়োজন হয় না। এটা সাধারণত ঘন থাকে। তবে পেইন্টিং এর সুবিধার্থে রং হালকা করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন পরিমান পানি বা Nk ব্যবহার করা যায়। এক্রলিক খুব টেকসই একটা রং।
এক্রলিক রঙের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হওয়ায় কাপড়ে ব্যবহারের জন্য সাধারণত প্রোফেশনালি এটা খুবই কম ব্যবহার করা হয়।
এক্রমিন কালার পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে Neutex, Nk, Binder, Oxl, Hardner, Nilonfixer, Apriton, White paste এই ক্যেমিকেল গুলো বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে তার ভিতর Raw color / কাচা রং দিয়ে স্থায়ী রং তৈরি করা হয়।
ভালো মানের ক্যেমিকেল আর সঠিক অনুপাতে তার মিশ্রণই কাপড়ে রং কে স্থায়ী করে।
এক্রমিন কালার পদ্ধতির আবার দুটি পদ্ধতি রয়েছে,
ক) নিউটেক্স পদ্ধতি
খ) হোয়াইট পেস্ট পদ্ধতি
ক্যেমিকেল মিক্সিং এর ফিক্সড কোনো নিয়ম নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাপড়ে প্রয়োজন অনুযায়ী কোন কোন ক্যেমিকেল এর কম বেশি করার প্রয়োজন হয় যা বেশি কিছু দিন নিয়মিত কাজ করার মাধ্যমে আয়ত্তে আনতে হয়।
নিউটেক্স পদ্ধতি
এ পদ্ধতি কালার কাপড়কে তুলনা সফট করে। হালকা রঙের কাপড়ে রঙকে গাড় ভাবে ফুটিয়ে এ তুলতে হলে নিউটেক্স পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।
হোয়াইট পেস্ট পদ্ধতি
এ পদ্ধতি কাপড়কে কিছুটা হার্ড করে তোলে। কিন্তু ডীপ কালারের কাপড়ে(কালো, খয়েরী, ডীপ নেভী ব্লু) এ পদ্ধতিতে কালার না করলে আসল রঙ ফুটিয়ে তোলা যায় না।
পেইন্ট আর প্রিন্ট নিয়ে বিভ্রান্তি
অনেকেই হ্যান্ড পেইন্ট কে প্রিন্ট বলে থাকেন। শিল্পী দের জন্য ব্যাপারটা কষ্টের। যে ডিজাইন মেশিনে করা হয় সেটাকে প্রিন্ট বলে। অপরদিকে যে কাজ হাতে করা হয় তাকে হ্যান্ড পেইন্ট বলে।
প্রিন্ট মেশিনে করা হয় বলে সময় লাগে কম,কিন্তু পেইন্ট হাত দিয়ে করা হয় বলে বেশ সময় লাগে।
হ্যান্ড পেইন্ট এর দাম
বর্তমান সময়ে হ্যান্ড পেইন্ট এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। যেহেতু হ্যান্ড পেইন্ট অনেক সময় সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য তাই এর দাম টাও ভাল হওয়াটাই স্বাভাবিক।শিল্পীর শ্রমের মুল্য মুলত নির্ভর করে তার কাজের মানের উপর।
যে কাজ যত বেশি জীবন্ত সে কাজ করতে শিল্পীর তত বেশি শ্রম দিতে হয়।
আজকাল কিছু মৌসুমী পেইন্টার তাদের পন্য স্বাভাবিকের চেয়ে কম দিয়ে বেশি ক্রেতা পাওয়ার আশায় বাজার ধ্বংস করছে।
হ্যান্ড পেইন্ট এর সম্ভাবনা
আজকাল অনেক তরুন উদ্যোক্তা শিল্পী কাজ করছেন এই সেক্টরে। কাগজ কিংবা কাপড়ে হ্যান্ড পেইন্ট করে তারা গড়ে তুলেছেন ছোট্ট ব্যবসায়। তাদের হাত ধরে নানান জিনিসে হ্যান্ড পেইন্ট এর চল শুরু হয়েছে।
ই কমার্স কে কাজে লাগিয়ে হ্যান্ড পেইন্ট শিল্পী কে তুলে ধরা হয়েছে অন্য এক উচ্চতায়।
পোশাকে হ্যান্ড পেইন্ট
বর্তমান সময়ে হ্যান্ডলুমে আকা পোশাক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে। মসলিন,জামদানি,সুতি,খেস,হাফসিল্ক, খাদি কাপড়ে পেইন্ট করা হয়। পরিহিত যাবতীয় পোশাক থেকে শুরু করে বিছানা চাদর, থ্রিপিস, শাড়ি,পাঞ্জাবি ফতুয়া কুর্তি ইত্যাদিতে আকা হয়।
![hand painted sharee](https://handpaintdress.com/wp-content/uploads/2023/10/hand-painted-sharee.jpg)
হ্যান্ড পেইন্ট পোশাকের যত্ন
আমরা আজকের আলোচনায় হ্যান্ড পেইন্ট ও হ্যান্ড পেইন্ট করার নিয়ম নিয়ে কথা বলেছি। এখন কথা বলবো হ্যান্ড পেইন্ট পোশাকের যত্ন নিয়ে। নানান ক্যামিকেল একসাথে মিক্স করে রঙ তৈরি করে কাপড়ে ডিজাইন হাতে আঁকা হয়। এই পোশাকের তাই রয়েছে বিশেষ যত্ন। খারযুক্ত সাবান ব্যাবহার করার বদলে শ্যাম্পু ব্যাবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়। কাপড় ভিজিয়ে আলতো হাতে ধুতে হবে। অল্প রোদে কাপড় উল্টিয়ে শুকোতে হবে। নইলে রঙ জ্বলে যেতে পারে।
তবে ড্রাই ওয়াশ করতে পারলে ভাল হবে।
ব্যাবহারের পর আঁটোসাটো করে ফেলে না রেখে বরং রোদ বা ফ্যানে শুকিয়ে নিতে হবে। মাঝে মাঝে আলমারি থেকে বের করে রোদে শুকিয়ে নিলে ভাল হয়।
ইস্ত্রি করতে হবে কাপড়ের উল্টো পিঠে। এতে রঙ ভাল থাকবে।
একটা সুন্দর পোশাক মানুষের মন ভাল করে দিতে পারে। আর তা যদি হয় পছন্দেরর রঙ আর ডিজাইনের তবে তো সোনায় সোহাগা।
হ্যান্ড পেইন্ট কাপড়ে যেমন এনে দেয় নতুনত্ব তেমনি ছড়ায় মুগ্ধতার আবেশ।
Blog Writer – Md. Hazrat Ali Saikat
আলহামদুলিল্লাহ
অসখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
অনেক কিছু জানলাম
তবে আমি ১টা অর্ডার পাইছি
লাইফের ফাস্ট
তাও সাদা শাড়িতে করার
এখন আমি কেমনে কি করবো বুঝতে পারছিনা
আর্টের জগতে নতুন
যা কাজ করছি টুকটাক মাস্কে করছি।
অর্ডার তো নিছি
কিন্তু কিভাবে কি করবো যদি আমাকে যেকোনোভাবে বুঝাতেন
কৃতজ্ঞ থাকতাম😢